নবম-দশম শ্রেণি ইতিহাস ১০০% সাজেশন-২।।ছাত্রনেটওয়ার্ক।।
35.বাস্তিল কী? কবে, কীভাবে এর পতন ঘটেছিল?
উঃ-বাস্তিল : বাস্তিল হল ফ্রান্সের একটি কুখ্যাত দুর্গ। বাস্তিলের পতন:১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতন হয় ফরাসি জনগণের আক্রমণে।
36.রাজা ষোড়শ লুই কত খ্রিস্টাব্দে স্টেট জেনারেলের অধিবেশন ডেকেছিলেন? এর আগে কত খ্রিস্টাব্দে এর শেষ অধিবেশন বসেছিল ?
উঃ-রাজা ষোড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন ডেকেছিলেন। এর আগে ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে স্টেট জেনারেলের শেষ অধিবেশন বসেছিল।
37.১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
উঃ-বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি স্বৈরশাসনের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে প্রচুর নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষকে বন্দি করে রাখা হত। প্যারিসের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এবং কারারক্ষীদের হত্যা করে কুখ্যাত এই দুর্গ দখল করে নেয়।
38.প্যারিস কমিউন’ কী?
উঃ- ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের বিপ্লবী জনগণ প্যারিসের পৌরশাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। নিজেদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করে যে অস্থায়ী পৌরপরিষদ গঠন করে, তাকেই
‘প্যারিস কমিউন’ বলা হয়।
39.‘মহা আতঙ্ক’ (Great Fear) কী ?
উঃ-প্যারিস শহরে গণ অভ্যুত্থান এবং বাস্তিল দুর্গের পতন ফ্রান্সের গ্রামগুলিতে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টিকরে। এই সময়ে গ্রামের কৃষকদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, তাদের শায়েস্তা করতে অভিজাতদের সেনাবাহিনী ও গুন্ডারা আসছে। এই মিথ্যা রটনাই ফ্রান্সের ইতিহাসে মহা আতঙ্ক’ (Great Fear) নামে পরিচিত।
40.বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব কী ?
উঃ-বাস্তিল দুর্গ ছিল বুরবোঁ রাজতন্ত্রের স্বৈরচারিতার প্রতীক। বাস্তিল দুর্গের পতনের প্রধান গুরুত্ব ছিল— 1, ফ্রান্সে বুরবো রাজাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। 2, বাস্তিল দুর্গে বন্দি নিরপরাধ ফরাসি জনসাধারণ মুক্তি পায়। ও বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমে ফ্রান্সে বিপ্লবের জয়যাত্রা সূচিত হয়।
41.টেনিস কোর্টের শপথ’ বলতে কী বোঝায়?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা স্টেট জেনারেলের অধিবেশনে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সভাকক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন সেটি তালাবন্ধ আছে। তখন তারা আবে সিয়েস ও মিরাববার নেতৃত্বে পাশের টেনিস খেলার মাঠে সমবেত হন। এখানে তারা শপথগ্রহণ করেন যে, যতদিন না ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা হচ্ছে ততদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। একে ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ বলা হয়।
42.মূল সংবিধান রচনার আগে ফরাসি সংবিধান সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উল্লেখ করো।
উঃ-মূল সংবিধান রচনার আগে ফরাসি সংবিধান সভা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে। যথা— 1, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট সামন্ততন্ত্রের অবসানের কথা ঘোষণা করে এবং 2, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের কথা ঘোষিত হয়।
43.মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রটি কী কী অনুকরণ ফিজিওক্র্যাটস’কাদের বলা হয় ?
উঃ- ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়, যারা অবাধ বাণিজ্য ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন। তাদের ফিজিওক্র্যাটস বলা হয়। এই মতবাদের প্রবক্তা হলেন কুয়েসনে, অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ। এই অর্থনীতিবিদরা ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেন।
44.ফ্রান্সের জাতীয় সভা কীভাবে সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়?
উঃ-ফ্রান্সে তিনটি সম্প্রদায়ের মিলিত অধিবেশনে ফ্রান্সের জন্য। সংবিধান রচনার দায়িত্ব জাতীয় সভাকে দেওয়া হয়। এর ফলেই জাতীয় সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়।
45.মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ বলতে কী বোঝো ?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ফ্রান্সের সংবিধান সভা একটি ঘোষণাপত্রে মানুষের অধিকারের কথা ঘোষণা করে। এটি মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ নামে পরিচিত। এতে বলা হয়— বি। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।আইনের চোখে সকলেই সমান।
46.সাসপেনসিভ ভেটো’ (Suspensive Veto) বলতে কী বোঝো?
উঃ-ফরাসি সংবিধান সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনসভা কর্তৃক প্রবর্তিত কোনো আইন রাজা সম্পূর্ণ বাতিল করতে না পারলেও সাময়িকভাবে মুলতুবি রাখতে পারতেন। রাজার এই ক্ষমতা সাসপেনসিভ ভেটো’ নামে পরিচিত। অবশ্য যে-কোনো আইন পরপর তিনবার আইনসভা কর্তৃক গৃহীত হলে রাজা তা মেনে নিতে বাধ্য হতেন।
47.করে রচিত হয়েছিল?
উঃ-মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রটি ইংল্যান্ডের ম্যাগনাকার্টা’, ‘বিল অফ রাইটস্', আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং জ্ঞানদীপ্ত দার্শনিকদের মতবাদ-এর অনুকরণ করে রচিত হয়েছিল।
48.পিলনিজের ঘোষণাপত্র’ কী ?
উঃ- ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট অস্ট্রিয়ার সঙ্গে লিও পোন্ড ও প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক উইলিয়ম ‘পিলনিজ’ নামক জায়গায় এক বৈঠকে মিলিত হয়ে পিলনিজ ঘোষণাপত্র প্রচার করেন। এতে তারা অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলিকে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার ডাক দেন।
49.কোন ঘটনা ‘সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত ?
উঃ-১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বিপ্লবী-কমিউন কয়েক হাজার রাজতন্ত্রের সমর্থক ব্যক্তিকে বন্দি করে এবং কারাগারে অনেক মানুষকে হত্যা করে। এই ঘটনা সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এই ঘটনা রাজতন্ত্রের অবসানকে সুনিশ্চিত করে।
50.ব্যক্তি ও নাগরিক অধিকারপত্র’ -এর লক্ষ্য কী ছিল?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট সংবিধান সভা একটি ঘোষণাপত্রে মানুষ ও নাগরিকদের অধিকার ঘোষণা করে। এর লক্ষ্য ছিল 1.ফ্রান্সের জনগণকে পুরাতনতন্ত্রের কবল থেকে স্বাধীন করা এবং 2.সকল মানুষের জন্য সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।
51.অ্যাসাইনেট’ কী ?
উঃ- অ্যাসাইনেট হল ফরাসি সংবিধান সভা প্রবর্তিত একপ্রকার কাগজের নোট। সংবিধান সভা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্রান্সের গির্জার সব ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং তা আমানত রেখে তার পরিবর্তে যে কাগজের নোট চালু করে, তা অ্যাসাইনেট নামে পরিচিত।
52.রাজতন্ত্রের শবযাত্রা’ কাকে বলে?
উঃ-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর প্যারিসের কয়েক হাজার মহিলার দাবি অনুসারে রাজা ষোড়শ লুই সপরিবারে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভার্সাই থেকে প্যারিসে আসতে বাধ্য হন। মহিলাদের শোভাযাত্রার সূত্রে রাজার প্যারিসে আসার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক রাইকার রাজতন্ত্রের অস্তিন যাত্রার সূচক তথা রাজতন্ত্রের শবযাত্রাস’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
53.ব্রান্সউইক ঘোষণাগ’ কী ?
উঃ-প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক উইলিয়ম ষোড়শ লুইকে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ফ্রান্স যখন অগ্নিগর্ভ তখন রাজার নির্দেশে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার যৌথ সেনাধ্যক্ষ ডিউক-অফ ব্রান্সউইক এক ঘোষণাপত্রে জানান, ফরাসি রাজপরিবারের নিরাপত্তা কোনোভাবে বিঘ্নিত হলে তিনি প্যারিস ধ্বংস করে দেবেন। ফরাসি জাতির প্রতি চরম অপমানজনক এই ঘোষণাই ব্রান্সউইক ঘোষণা নামে পরিচিত।
54.ফরাসি সংবিধান সভা নাগরিকদের কী কী ভাগে বিভক্ত করেছিল ? অথবা, সক্রিয়’ ও ‘নিষ্ক্রিয় নাগরিক’ বলতে কাদের বোঝাত?
উঃ-ফরাসি সংবিধান সভা নাগরিকদের সক্রিয়’ ও ‘নিষ্ক্রিয় এই দুভাগে বিভক্ত করেছিল। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির মালিকগণ সক্রিয় এবং সম্পত্তিহীন ব্যক্তিগণ নিষ্ক্রিয় নাগরিক নামে পরিচিত ছিলেন। সক্রিয় নাগরিকরাই কেবল ভোটাধিকার লাভ করেন।
55.সিভিল কনস্টিটিউশন অফ দ্য ক্লার্জি কী ?
উঃ-সিভিল কনস্টিটিউশন অফ দ্য ক্লার্জি’ বা ‘ধর্মযাজকদের সংবিধান’ হল একটি দলিল, যার দ্বারা গির্জার উপর থেকে পোপের সমস্ত কর্তৃত্বের অবসান ঘটানো হয়। এ ছাড়া গির্জাকে রাষ্ট্রের একটি দপ্তরে পরিণত করা হয়। যাজকরা রাষ্ট্রীয় বেতনভুক কর্মচারীতে পরিণত হয়।
56.মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রকেগ পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা’ বলা হয় কেন?
উঃ- মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রকে ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা’ বলে উল্লেখ করেছেন ঐতিহাসিক ওলার (Aulard)। কারণ এই ঘোষণায় মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সমানাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। পুরাতন রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সংবিধান সভার দুটি অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে লেখো।
উঃ-সংবিধান সভার দুটি অর্থনৈতিক সংস্কার হল— 1.ফ্রান্সে গির্জার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং 2.অ্যাসাইনেট’ নামক কাগজের নোট চালু করা হয়। ঐ সকল প্রকার পরোক্ষ কর তুলে দেওয়া হয়।
57.কে, কোন ঘটনাকে দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলেছেন?
উঃ-১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট জেকোবিনদের নেতৃত্বে ফ্রান্সের ক্ষিপ্ত জনতা টুইলারিস রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে রাজার দেহরক্ষী দলকে হত্যা করে। এই ঘটনাকেই ঐতিহাসিক লেফেভর ‘দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন।
58.রাজা ষোড়শ লুই-এর কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল?
উঃ-রাজা ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে জেকোবিন ও জিরন্ডিন দলের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছিল। এরপর ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি গিলোটিন যন্ত্রে তাকে হত্যা করা হয়।
59.ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় (১৭৯১ খ্রি.) কোন কোন রাজনৈতিক দল ছিল ?
উঃ-ফ্রান্সের নতুন আইনসভায় (১৭৯১ খ্রি.) প্রধানত চারটি রাজনৈতিক দল ছিল। যথা- 1. দক্ষিণপন্থী শাসনতান্ত্রিক দল, 2.জিরন্ডিন দল, 3. জোকোবিন দল এবং 4.মধ্যপন্থী দল।
60.‘জেকোবিন’ কাদের বলা হত? অথবা, জেকোবিন দল বলতে কী বোঝো?
উঃ-জেকোবিন হল ফরাসি আইনসভার একটি রাজনৈতিক দল। ফ্রান্সের জেকোবিন দলের সদস্যদেরই ‘জেকোবিন’ বলা হত। জেকোবিনরা ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থকও উগ্র বামপন্থী। জেকোবিনরা কয়েক বছর ফ্রান্সের শাসন পরিচালনা করেছিলেন। জেকোবিনদের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন রোবসপিয়র।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url