OrdinaryITPostAd

গ্রেডিং নিয়ে আমার মত - Nullblogger



১.

আমি সাধারনত অনেক রাতে ঘুমাই । তাই সকালে উঠতেও দেরী হয় । আসলে আমি যখন উঠি সেটাই আমার কাছে সকাল । আসলে রাত জেগে তেমন কিছু করি না ,  বই পড়ি বিভিন্ন মজার মজার উপন্যাস । কখনো বিজ্ঞানের বই তো কখনও হরর বই । আসলে বই পড়তে ভালই লাগে । তবে আমার দেরী করে উঠার একমাত্র কারন নয়। আমি যে মেসে থাকি সেখানে সকালবেলা কলের পাড় ভর্তি থাকে , টয়লেটের জন্যও সিরিয়াল পাওয়া যায়না । তাই একটু দেরী করে উঠলে সহজেই টয়লেটের সিরিয়াল পাওয়া যেত । আমি যেই রুমে থাকি সে রুমটা একেবারে রান্নাঘরের পাশে তাই খাবার দাবারেরও তেমন সমস্যা হয় না । শুধু পড়াশোনার জন্যই এই ভিন শহরে আসা ।

 

 

২.

বিকেলের সময় মেস থেকে কিছু দুরে একটা নদীর পাশে বসে থাকি ।  আসলে এটা নদী নয় । কৃত্রিম লেক । তবুও এটিকে সবাই  কুইন রিভার নামে কেন ডাকে কে জানে। এখানে বসার জন্য কিছু সিমেন্টের তৈরী চেয়ার আছে । তবে আমি এখানে বসি না  , শুয়ে থাকি । মাঝে মাঝে বাদাম আলা , চাআলা গেলে  কিছু কিনে খাই । শহুরে জীবন আসলেই মন্দ মনে হয় না ।

 

 

৩.

গ্রাম থেকে খরচ আসাটা কমে গিয়েছে । এদিকে আমার পড়াশোনাও শেষের দিকে। পরীক্ষাটা দিয়েছি  এখন খালি ফলাফলের আশায়। তাই মাঝে মাঝে চাকরীর বিজ্ঞাপন নামে  একটা পত্রিকা পড়ি । এখানে চাকরী বিজ্ঞাপনের চেয়ে আসবারপত্রের বিজ্ঞাপনই বেশি । মেসের বড়ভাইরা বলে চাকরীর জন্য এ প্লাস অবশ্যই পেতে হবে । এ প্লাস ছাড়া কখনই চাকরী হবে না ।

 

 

৪.

একটু পর আমার রেজাল্ট দিবে । মনে পড়ে গেল আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম গ্রামের কারো পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে জিজ্ঞেস করত যে পাশ ? না কিন্তু এখন  এরকম করে না । এখন জিজ্ঞেস করে এপ্লাস ? আচ্ছা সব কিছুতে যদি এপ্লাস ঢুকে যায় তবে কেমন হবে ? এ পজেটিভ গ্রুপের রক্তের মানুষ প্রথম শ্রেনীর নাগরিক  , যারা এপ্লাশ পাবে তারাও প্রথম শ্রেণীর নাগরিক আর যারা এ প্লাস পাবে না তারা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক । তখন হয়তো মানুষের চরিত্র নির্ধারন হবে গ্রেডিং দিয়ে । ওইতো ২ টা বেজে গেছে ।  অনলাইনে রেজাল্ট পাওয়া যাবে । আমি এখন বসে আছি একটা সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারের সামনে । রেজাল্টের ওয়েবসাইটাতে ঢোকার চেষ্টা করছি । কিন্তু আধা ঘন্টা ধরে সার্ভার নট ফাউন্ড লেখা উঠছে । অবশেষে রেজাল্টটা পাওয়া গেল।  না আমি এ প্লাস পাই নি । পেয়েছি বি গ্রেড ।তাহলে আমি  এখন তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক।

 

৫.

রেজাল্টটা দেখে কেন জানি মন খারাপ হল না । শুনলাম কে নাকি এ প্লাশ পেয়েছি কিন্তু গোল্ডেন না পেয়ে আত্নহত্যা করেছে । এ কথাটা শুনেই মন খারাপ হল । যে আত্নহত্যা করেছে সে আমার একজন ভালো বন্ধু ছিল । আচ্ছা  এমন কোন সিষ্টেম নেই যা দিয়ে আমি যা নাম্বার পেয়েছি তা তাকে দিয়ে দিতে পারতাম ?

 

৬.

একটু আগে মেসে ফিরলাম । উপর তালার বড়ভাই আমার রেজাল্টের খবর শুনে বলল “ মন খারাপ করার কিচ্ছু নেই । আবার এই পরীক্ষাটা দেও । পরেরবার এ+ নিয়ে আসিও । চিন্তা নাই , আমি ব্যবস্থা করে দিব , চোখ টিপে বুঝিয়ে দিল ।”। কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝলাম না , মন খারাপ করব কেন ?  ঠিক নিচে নামতেই রিপনভাই বলল যে “তোর মত মফিস আমি এই জীবনে দেখি নাই ! কত প্রশ্ন চারিদিকে ফাস হচ্ছে আর তুই কিনা বি পাইলি ? এর চেয়ে আত্নহত্যা করলেও ভালো হইত ? কোনদিন কি তুই চাকরী পাবি ? ”। উত্তর দেওয়ার মতো কোন ভাষা পেলাম না । তার কথায় যথেষ্ঠ যুক্তি আছে।

 

 

৭.

আমি এখন বসে একটা দুজন ভদ্রলোকের সামনে । আসলে তারা ভদ্রলোক কিনা আমার জানা নেই । তবু সন্মান করে ভদ্রলোক বলতে হয়। একই সাথে আমি তাদের সামনে বসে আছি আবার তারাও আমার সামনে বসে আছে ।  আমার পরণে আছে  একটা পুরাতন কোর্ট , যদিও এটা নতুনের মত লাগছে । মেসের একবড়ভাই এর কাছ থেকে ৫০ টাকায় ২ ঘন্টার জন্য ভাড়া নিলাম।  আমার সামনের দুজনও কোর্ট টাই পড়ে আছে । আচরন এবং নড়া চড়ায় বোঝা যাচ্ছে ডান পাশের জন সিনিয়র । প্রথমেই সিনিয়রজন আমার কাগজ দেখে পিএকে ডাকল । তাকে গালাগালি করে বলল ”বি গ্রেট এর ষ্টুডেন্টকে এখানে আনার সাহস কি করে পাও”। আমি কোন কথা না বলে বেড়িয়ে আসলাম ।

 

কিছুদিন পরে এক সিকিউরিটি গার্ডের কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিতে আসলাম । এই ইন্টারভিউতে আমাকে সরাসরি ঘুষ দেওয়ার জন্য বলা হল । আমি এতদিন জানতাম  এরা ঘুষ গোপনে চায় । কথার মারপেচে বুঝিয়ে দেয় । কিন্তু আজকে আমার ধারনাটা যে ভুল তার প্রমান পেলাম । নিরীহ চোখে আমি বেরিয়ে আসলাম ।

 

৯.

আজ বহুদিন পরে গ্রামে আসলাম । আমাকে দেখতেই চাচা বলল , “শহর থেকে কি হয়ে এসেছিস ? ডাক্তারী নিয়ে নাকি ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছিস ? ” ।  আমি উত্তর দিতে পারছিলাম না । আসলে এদেশের বেশির ভাগ মানুষই জানে এ দেশে শুধু দুটি পেশা আছে । এক ডাক্তার এবং অন্য্যটি ইন্জিনিয়ার । এদেরেকে বুঝাবার মত কেউ নেই ।

 

১০.

যখন অনেক চেষ্টা করেও কোন চাকরী যার অর্থ চাকরগীরি , পাচ্ছিলাম না তখন যেন মনে হল আমার পায়ের নিচ হতে মাটি সরে যাচ্ছে । আসলে কারও পায়ের নিচ হতে মাটি সরে যায় না । ‍যখন কারও পায়ের নিচ হতে মাটি সরে যায় তখন মাটির সাথে তাকেও সরে আসতে হয় । নাহে সেখানেই পড়ে যেতে হয় । তাই আমিও সরে আসলাম । গন্তব্য নিজের গ্রাম । আমাদের দেশ কৃষির দেশ । পড়ালেখা করেছি তো কি হয়েছে ? কৃষি কাজ করা যাবে না ?

 

১১.

আজ থেকে মেলাবছর আগে চাকরী না পেয়ে গ্রামে এসেছিলাম  । ভেবেছিলাম উপন্যাসের পাতার মত আমার জীবনও বদলে যাবে । আমি সফল হব । কিন্তু এটা উপন্যাসের পাতা না । এখানে কেউ এমনি এমনি সফল হতে পারে না । আমিও পারি  নি । শুধু দিনে এনে দিনে খাবার ক্ষমতা হয়েছে । আজ আমি বৃদ্ধ তবুও এই রোদে মাঠের মধ্যে সারাদিন কাজ করতে হয় । এছাড়া যে আর কোন উপায় নেই । ইস ! যদি সে সময় একটা এ প্লাস পেতাম তবে আমার জীবনটা বদলে যেত । কিংবা যদি রিপন আজ রিপন  ভাইয়ের কথাটা শুনতাম তাহলেও হয়তো কিছু হতে পারত । সামনে আরো কিছুটা সময় বাকি আছে । দেখি কিছু করতে পারি কিনা !

 

 

এ লেখার সমস্ত চরিত্র  , স্থান , কাল , পাত্র সবই কাল্পনিক । যদি বর্তমান , অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ কোন পরিস্থিতির সঙ্গে এখানকার ঘটনা মিলে যায় তবে লেখক  কোনভাবেই এর জন্য দায়ি নয় ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১