OrdinaryITPostAd

মুসলিম লীগের শাসন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংগ্রাম আলোচনা কর।

 


ভূমিকাঃ  ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। মুসলমান সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া উত্থাপন করার একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছিল মুসলিম লীগ, মুসলিম জাতীয়তাবাদের পক্ষে জনসমর্থন তৈরিতে এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ বাংলার মুসলমানদের জন্য ১১৭ টা আসনের মধ্যে ১১০টি আসন অর্জন করে এবং শুরু হয় মুসলিম লীগের শাসন । কিন্তু পরবর্তীতে মুসলিম লীগের জনবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড পরাজয় ডেকে আনে এবং দলটির জনপ্রিয়তায় ধস নামে।

আরো পড়তে পারেনঃ- মুসলিম লীগের অবক্ষয় এবং এর পুনর্গঠনে সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা কর।



মুসলিম লীগের শাসন 

নিম্নে মুসলিম লীগের শাসন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংগ্রাম সম্পর্কে আলোচনা করা হলাে-

১. অগণতান্ত্রিক আচরণ 

মুসলিম লীগ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অগণতান্ত্রিক আচরণ শুরু করে। মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণের শিকার হয় সােহরাওয়ার্দী। মুসলিম লীগ ১ প্রকার তাকে অগণতান্ত্রিকভাবে বহিষ্কার করে। পূর্ব বাংলার সােহরাওয়াদী সমর্থকরা কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের এরূপ নেতৃত্ব সহজে মেনে নিতে পারে নি। তারা মুসলিম লীগের বিকল্প রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

২. মুসলিম লীগ পকেট সংগঠন পরিণত 

মুসলিম লীগ দলের মধ্যে কোনাে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল না। পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগ খাজা নাজিমুদ্দীন এবং নুরুল আমিনের পকেট সংগঠনে পরিণত হয়। যার কারণে তাদের স্বৈরাচারী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসে সরকার বিরােধী যুব সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গঠিত হয়। এসব সংগঠন ফ্যাসিস্ট মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিল।



৩. রক্ষণশীলতা 

মুসলিম লীগ পাকিস্তানে রক্ষণশীল সংগঠনে পরিণত হয়। খাজা নাজিমুদ্দীন ও নুরুল আমিনের নেতৃত্বধীন বাংলার মুসলিম লীগ ছিল কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ থেকে গণবিচ্ছিন্ন। মুসলিম লীগের তরুণ ও প্রগতিশীল অংশকে সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। মুসলিম লীগ এবং লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শুরু করে পূর্ব বাংলার তরুণ সমাজ।

৪. গণবিচ্ছিন্ন মুসলিম লীগ 

মুসলিম লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্ষমতা গ্রহণের পর পূর্ব বাংলার মুসলিম নেতৃত্বে আসে খাজা নাজিমুদ্দীন ও নুরুল আমিনের হাতে। এরা ছিল গণবিচ্ছিন্ন নেতা। বাংলার মাটি ও মানুষের সাথে তাদের কোনাে যােগাযােগ ছিল না। এভাবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে মুসলিম লীগ সরকার অগণতান্ত্রিক পথে হাঁটতে থাকে।

৫. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন 

রাষ্ট্রভাষাকে কেন্দ্র করে মুসলিম লীগ সরকার চক্রান্ত শুরু করে। তার বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগ্রাম ইতিহাস এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। ৫৬% মানুষের বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে ৭% লােকের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ তীব্র আন্দোলনে ফেটে পড়ে।

৬. আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন 

মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী একটি কার্যকরী বিরােধী দল হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগ আবির্ভূত হয়।



৭. উপনির্বাচন ও নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত 

মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। যার কারণে মুসলিম লীগ নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। বিভিন্ন অজুহাত ও আইনের কথা বলে প্রাদেশিক আইন সভার মেয়াদ তিন বছর বাড়ানাে হয়। যা পূর্ব বাংলার জনগণ মেনে নিতে পারে নি। তারা গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শুরু করেন।

৮. ১৯৫৪ সালের নির্বাচন 

মুসলিম লীগকে মােক্ষম জবাব দেয় পূর্ব বাংলার জনগণ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে, মুসলিম লীগ  শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। পূর্ব বাংলার জনগণ মুসলিম লীগের দমননীতি প্রতিবাদস্বরূপ যুক্তফ্রন্টের পক্ষে সমর্থন প্রদান করে।

৯. মৌলিক অধিকার খর্ব 

জনগণের মৌলিক অধিকার মুসলিম লীগ সরকার ব্যাপকভাবে খর্ব করে। স্বাধীনতা লাভের পরে বিভিন্ন পত্রিকা বন্ধ, বিরােধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আটকসহ নির্যাতন শুরু করে মুসলিম লীগ।

১০. আইনশৃঙ্খলার অবনতি

সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিম লীগ দাঙ্গা সৃষ্টি করে বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। জনজীবন নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়। যা মুসলিম লীগের পতন ত্বরান্বিত করে।

১১. সংবিধান প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রিতা 

পূর্ব বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্খার পরিপন্থি ছিল মুসলিম লীগ রচিত সংবিধান। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৯ বছর পর সংবিধান রচনা করলেও তাতে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে কোনাে ভারসাম্য ছিল না। যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি ও সংবিধান স্থগিত করা হয়।

আরো পড়তে পারেনঃ- মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেসহ তাৎপর্য আলোচনা কর।



উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট মুসলিম লীগ সরকার অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দমনপীড়ন চালাতে থাকে। অপরদিকে, সাধারণ মানুষ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ক্রমাগত শ্রমিক ধর্মঘট, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি, কৃষক বিদ্রোহ, পুলিশ বিদ্রোহ, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভাষাগত সমস্যা ইত্যাদির ফলে জনগণের আশা-আকাক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালের মার্চ এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে অপরদিকে মাত্র ৮টি আসন লাভ করে মুসলিম লীগ । পূর্ব বাংলার মানুষের ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফলেই মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১