OrdinaryITPostAd

পুরুষ খৎনা বা পুরুষ লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন বা পুংলিঙ্গাগ্রভাগছেদন করা। একটি মহান সুন্নত।

 

 

 


পুরুষ খৎনা বা পুরুষ লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন বা পুংলিঙ্গাগ্রভাগছেদন করা। একটি মহান সুন্নত। যুগে যুগে বড় বড় নবী-রাসুলও এ সুন্নত পালন করেছেন। সর্বপ্রথম এ সুন্নত পালন করেছেন হজরত ইবরাহিম (আ.)।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করেন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব। সে বলল, আমার বংশধরদের থেকেও? তিনি বলেন, জালিমরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ইমাম আবদুর রাজ্জাক (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ইবরাহিম (আ.)-এর পরীক্ষাগুলোর মধ্য থেকে একটি শারীরিক পরীক্ষা হলো খতনা করা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৪০৬)
খতনা নবীদের সুন্নত:

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পর সব নবী-রাসুল খতনা করিয়েছিলেন। অনেক হাদিস শরিফে এ সুন্নত পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতরাত, অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব পাঁচটি—খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)

খতনার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:

খতনার দ্বারা শরীর অধিক পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। খতনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। এর ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খতনা করালে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে। পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। লিঙ্গের মাথায় প্রদাহ, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করলেও খতনা করালে তা সেরে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষের খতনা এইচআইভি বা এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে, এটি আংশিক সুরক্ষা দেয়। আফ্রিকার যেসব দেশে খতনার হার বেশি, সেসব দেশে এইডসের হার তুলনামূলক কম।

খতনার বৈজ্ঞানিক সুফল:
পুরুষের খতনাকে আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজাতীয় (ব্যাকটেরিয়া) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খতনার প্রধান সুবিধা হলো, এর ফলে লিঙ্গের অগ্র ত্বকে যে তরল জমে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে, তা থেকে রেহাই পেতে পারে। দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (সা.) খতনার কথা বলেছেন, ব্যাপক গবেষণা শেষে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করেছে, খতনার ব্যাপক উপকারিতা আছে।

খতনার সুফল নিয়ে অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস চমৎকার গবেষণা করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের সারকামসিশন (খতনা) করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়। তিনি মনে করেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।

ওয়াশিংটনের সৈনিক মেডিক্যাল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. বিজবেল বলেন, ‘আমি প্রথমে খতনার বিরোধী ছিলাম, পরে দীর্ঘ গবেষণার ফলে প্রমাণিত হলো যে মূত্রথলি ও মূত্রনালিবিষয়ক অনেক জটিল রোগের সমাধান হলো খতনা। ’

ডা. রুবসন তাঁর গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, ১৯৩০ থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষ আমেরিকায় মূত্রনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে কেবল ১০ জন খতনাকৃত রয়েছে, বাকি সব খতনাবিহীন ব্যক্তি।

নবী করীম (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে খাৎনার জন্য কোন অনুষ্ঠান করার প্রমাণ ছহীহ হাদীছে পাওয়া যায় না। ওছমান বিন আবুল ‘আছ ছাক্বাফী (রাঃ)-কে একটি খাৎনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হ’লে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় খাৎনার অনুষ্ঠানে যেতাম না এবং এজন্য আমাদের দাওয়াতও দেওয়া হ’ত না (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৭/২৮৬)।

তবে এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের জন্য ছয়টি কর্তব্য রয়েছে। যার অন্যতম হ’ল যখন সে দাওয়াত দেয়, তা কবুল করা’ (তিরমিযী হা/২৭৩৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪৬৩০)। উক্ত হাদীছের আলোকে পরবর্তী বিদ্বানগণ খাৎনা বা অনুরূপ শরী‘আতসম্মত উপলক্ষে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এতে আড়ম্বর প্রকাশ করা, আলোকসজ্জা করা বা অপব্যয় করা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘খাৎনা উপলক্ষে দাওয়াত করা জায়েয। যার ইচ্ছা হয় করবে, আর যার ইচ্ছা বর্জন করবে’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২০৬)। ইবনু কুদামাহ বলেন, ‘বিবাহের ওয়ালীমা ছাড়া খাৎনা ও অন্যান্য সকল দাওয়াতের বিধান হ’ল তা মুস্তাহাব। কেননা এতে খাদ্য খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই ধরনের দাওয়াত গ্রহণ করাও মুস্তাহাব। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে খাৎনা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হ’লে তিনি কবুল করে খাবার গ্রহণ করেন’ (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৭/২৮৬; মারদাভী, আল-ইনছাফ ৮/৩২০-২১)। ইমাম শাফেঈ ও ইমাম নববী (রহঃ) প্রমুখ খাৎনার দাওয়াতকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৬/১৯৫; রাওযাতুত ত্বালেবীন ৭/৩৩৩)। শায়খ বিন বায সহ সমকালীন বিদ্বানগণ বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে দোষ নেই। কেননা খাৎনা শরী‘আতসম্মত বিষয়সমূহের অন্যতম। আর আল্লাহর শুকরিয়ার্থে এতে খাবার প্রস্ত্তত করায় কোন বাধা নেই’ (ফাতাওয়া আল-কাবীর; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৪২)। তবে এজন্য বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যেমন সুন্নাতে খাৎনা অনুষ্ঠানের জন্য তোরণ নির্মাণ, কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত প্রদান, উপহার সামগ্রী প্রদান, কেউ দাওয়াতে বাদ পড়লে সম্পর্কচ্ছেদ ইত্যাদি কুসংস্কার সমূহ অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১