OrdinaryITPostAd

সাবজেক্ট রিভিউ: রাষ্ট্রবিজ্ঞান

  

রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পৃথিবীর সবচেয়ে আদি এবং শ্রেষ্ঠ বিষয়। মানুষ যখন থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র নামক ব্যবস্থার অধীনে আসে তখন থেকেই এই বিষয়ের পথচলা, এই পথচলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রাজনীতি বিজ্ঞান নাম ধারণ করে। রাষ্টবিজ্ঞান না হয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান এজন্যই যে রাজনীতির মধ্যে রাষ্ট্র ধারণ করে অনায়সেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পথচলার শুরু হতেই এই বিষয়ের যাত্রা শুরু হয় যদিওবা প্রাতিষ্ঠানিক বয়স কিছু পরে হয়। ধীরে ধীরে এই সাবজেক্ট নিজেকে এমন অবস্থানে উন্নীত করেছে যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যে কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে তার স্বকীয়তার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে এই ডিপার্টমেন্ট তাদেরই নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে।

এই ডিপার্টমেন্ট এসে আপনি পাবেন ড. ভুঁইয়া মনোয়ার কবির স্যারের সাথে ১৯৪৭ থেকে বর্তমান বাংলাদেশের ইতিহাসের আলোচনায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে, কিংবা আনোয়ারা ম্যাডামের রসাত্মক ভঙ্গিতে জটিল জটিল তত্ত্বগুলোর সহজবোধ্য ভাষায় বর্ণনা নিতে, যদি তাতেও মন নাভরে তাহলে এসে হাজির হবেন আলম স্যার তার অত্যন্ত পরিমিত রসে মজাদার উপায়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন দিকপালের কথা বলতে। এমন করে আপনি পাবেন প্রায় প্রতিটি সাবজেক্টে বিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীর সর্বোচ্চ সাহায্য। আর সবশেষে তো আছেই ডিপার্টমেন্ট বড় ভাইয়া,আপুদের সাহায্য, যারা আপনাকে গেঁথে নেবে এই ডিপার্টমেন্টে আপনার প্রথম পথচলার দিনেই।

এবার আসা যাক আপনি আগামী ৪বছরে কি কি পড়বেন?

আপনি যদি বিসিএস টার্গেট করেন তাহলে ধরে নেন রিটেনের প্রস্তুতির ৪০-৫০ভাগ আপনার সম্পূর্ণ হবে যদি আপনি মনোযোগী ছাত্র হন। প্রশাসনের বিভিন্ন পরিভাষা আপনার মুখে বুলি ফুটবে যা আপনাকে এগিয়ে রাখবে বিসিএস ভাইভাতে। যেমন আপনি পড়বেন রাষ্ট্রীয় নীতি, তুলনামূলক রাজনীতি, লোক প্রশাসন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্রিটিশ থেকে বাংলাদেশ পরিণত হওয়ার ইতিহাস, বাংলাদেশের সরকার, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, রুশো, কার্ল মার্ক্স, হবস, জন লক ইত্যাদি পৃথিবী বিখ্যাত মনিষীদের তত্ত্ব, তাদের জীবনধারা, সাথে করতে পারবেন তাদের সমালোচনা।

তবে এত দারুণ সব সাবজেক্ট পড়ে আপনি যদি শিক্ষকদের চাহিদামত লিখতে পারেন তাহলে ৩.৩০--৩.৬০ পর্যন্ত রেজাল্ট অনায়সেই করতে পারবেন, তবে শিক্ষকেরা আশায় আছেন আপনারা কেউ এসে স্যারদের থেকে জোর করে ৩.৮০-৪.০০ দখল করে নেওয়ার। তবে যতকথা এই পরীক্ষা নিয়ে, তা হল আমাদের ডিপার্টমেন্টের মজার দিক হল উনারা সহজে পরীক্ষা নিতে চাননা, ১২মাসকে ১৩/১৪/১৫মাস হলে উনারা পরীক্ষা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন(যদিও বর্তমানে বছরের পরীক্ষা বছরেই নিয়ে নেন টিচাররা)। চার বছরের অনার্স শেষ করতে সাড়ে চার বছরের কিছু বেশি লাগে।

আর সবিশেষ ব্যাপার হল আপনি এই ৪/৫ বছর স্নাতক, স্নাতকোত্তর করে আপনি কি কি করতে পারবেন?




আর্টিকেলটির বিশেষ কীওয়ার্ড

  • কোথায় পড়বেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান
  •  কি কি পড়া হয়  রাষ্ট্রবিজ্ঞান কোর্সে
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান চাকরি/ক্যারিয়ার

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট এর সবচেয়ে ইউনিক দিকগুলি---

১ঃ বিসিএস পরীক্ষার জন্য বেস্ট প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য আমাদের কোর্স রিলেটেড পড়াশোনাগুলো খুবই কার্যকরী। (প্রত্যেকবছরই বিসিএসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নজরকাড়া সাফল্য দেখা যায়)
২ঃ রোবোটিকস পড়াশোনা করা লাগবে না আপনাকে।
৩ঃ সকাল থেকে বিকেল টানা ক্লাস করার অসহ্য পেইন আপনাকে সহ্য করতে হবে নাহ।
৪ঃ রাজনৈতিক জ্ঞান আহরণের সর্বোচ্চ শিখরে পৌছতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর জুড়ি নেই।
৫ঃ ভালো সিজিপিএ তোলার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট আপনার জন্য বেস্ট চয়েস হবে,খাটনি করে পড়াশোনা করলে ভালো মার্কস এর ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারা যায়(খামখেয়ালিপনা একদমই গ্রহনযোগ্য নয়,তখন হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে)।

খেলাধুলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আধিপত্য সবারই জানা,ক্রিকেট এবং ফুটবল উভয় দিকে ভার্সিটির অন্যতম ডমিনেটিং টিম রাষ্ট্রবিজ্ঞান।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান যদি কারও বিষয় হয়, তাহলে ক্যারিয়ার কী কী অপশন খোলা রয়েছে?


*প্রথমত বিসিএসে প্রভূত সুবিধাঃ 

যাদ্বারা এক্কেবারে সচিব হওয়ার সুযোগ আছে, আপনি যে ফ্যাকাল্টিতে আসছেন তার নাম সমাজ বিজ্ঞান আর সমাজ বিজ্ঞানের জন্য চাকরি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড পর্যন্ত, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, এনজিও, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, এবং সর্বোচ্চ কথা হল বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাবজেক্ট আপনি পাবেন। সুতারাং একথা নিশ্চিত আপনার রুটিরুজির অভাব হবেনা। মূলকথা হচ্ছে এই ডিপার্টমেন্ট আপনাকে জ্ঞানের এক অকূল সাগরে পাড়ি দিতে দক্ষ করে তুলবে। আর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ এর কথা এসেই জানবেন।উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার জন্য USA, Canada, Australia এবং Europe-এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে।

*কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো: 

প্রথমত, অ্যাকাডেমিক লাইন তো খোলা আছেই। স্নাতকোত্তর স্তরে ৫৫ শতাংশ নম্বর এবং নেট/সেট পাশ করলে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। কেউ যদি না পড়িয়ে শুধুমাত্র গবেষণা করতে চায়, তবে তার সুযোগও ক্রমবর্ধমান। এমনিতেই ইউ জি সি-র ফেলোশিপ নিয়ে যে-কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু করা সম্ভব। গবেষণার বিষয় নানাবিধ হতে পারে।

সাধারণ ভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে রাজনৈতিক দর্শন, তুলনামূলক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হলেও, জনসাধারণ, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি নানাবিধ ক্ষেত্রে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। এ ছাড়াও মানবাধিকার, লিঙ্গবৈষম্য বা সেফোলজি-র মতো আকর্ষণীয় বিষয় চর্চার মাধ্যমে গবেষকদের চিন্তা ও কাজের পরিধি ক্রমশ বিস্তৃত হতে পারে। সাধারণত একটি গবেষণা আরও পাঁচটির সুযোগ ও পরিধিকে বিস্তৃত করে, নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়, কাজের সুযোগও বাড়ে।

*মিডিয়ায় কাজের সুযোগ: 

নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোনও একটি পর্যায় নিয়ে কেউ সাধারণ নির্বাচকমণ্ডলীর একটি অংশের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে গবেষণা করতে চান। জানতে চান সাধারণের আচরণগত বৈশিষ্ট্য। সে ক্ষেত্রে নিজ গবেষণার পরিধি বাড়ালে অচিরেই তিনি এক জন ভোট-বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন। এখন মিডিয়া প্রতিযোগিতার কালে তাঁর চাহিদা তখন বাড়তে পারে। এর জন্য গবেষককে অবশ্যই নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যেতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু এক বার প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

*সাংবাদিকতাঃ 

অবশ্যই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা সাংবাদিকতায় এলে সাফল্য পান। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমে প্রতিদিন আমরা যে খবরগুলিকে প্রধান হয়ে উঠতে দেখি বা যেগুলি নিয়ে নিয়মিত চর্চা-বিশ্লেষণ বা সম্পাদকীয় রচনা চলে, তার অধিকাংশই রাজনৈতিক। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি স্নাতকস্তর পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করে তার পর সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করেন, তবে তাঁর সাফল্য সুনিশ্চিত।

*আইনের পথ খোলা: 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা আইন ব্যবসাতেও অত্যন্ত সফল হন। সারা বিশ্বে লব্ধপ্রতিষ্ঠ যত জন আইনজ্ঞ রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতির পড়ুয়া। এখন উচ্চ মাধ্যমিকের পর সরাসরি আইন নিয়ে পড়া যায়। কিন্তু কেউ যদি স্নাতকস্তর পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ নিয়ে তার পর আইন পাঠ করেন, তবে আরও দ্রুত বিষয়ে প্রবেশ সম্ভব।

*রয়েছে NGO তে কাজএর সুযোগ: 

ছাড়াও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা বিভিন্ন এনজিও সংগঠনে কাজ পেতে পারেন। বিশেষত কেউ যদি সোশ্যাল ওয়ার্ক বা মাস কমিউনিকেশনের একটা পর্যায় পর্যন্ত পেশাদারি শিক্ষা লাভ করেন তো কথাই নেই। প্রকৃত সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে স্বাধীন গবেষণাকেন্দ্রও গড়ে তোলা সম্ভব। উচ্চশিক্ষায় গবেষণামূলক কাজে যত বেশি বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রসার ঘটবে, ততই গবেষকের স্বাধীনতা ও সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।


অবশেষে এতটুক বলতে পারি, নন-রোবোটিক্স অনার্স লাইফের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সেরা।

বর্ণিল এই ডিপার্টমেন্টে আপনাদের বরণ করব বলে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১