OrdinaryITPostAd

আলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা;Physics-Nullblogger

 

আলোর প্রকৃতি:

  1. যখন কোন আলোক উৎস থেকে আলো সরাসরি আমাদের চোখে আসে তখন আমরা উৎসটি দেখতে পাই।
  2. আলোক উৎস থেকে নির্গত আলো কোনো বস্তুর পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে যখন আমাদের চোখে আসে তখনও আমরা বস্তুটি দেখতে পাই।


 

  1. আলো হচ্ছে এক প্রকার শক্তি বা বাহ্যিক কারণ যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে বা দর্শনের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  2. আলো হলো এক প্রকার শক্তি যার মাধ্যমে আমরা কোনো বস্তু দেখতে পাই।
  3. আমরা যখন কানো বস্তু দেখি, তখন বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে আসে। চোখে প্রবিষ্ট আলো চোখের রেটিনায় বস্তুটির প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে এবং জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে বস্তুটির অনুরূপ একটি বস্তুর অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  4. প্রাচীনকাল হতে মানুষ আলোর প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের চেষ্টা করে আসছে। এক সময় ধারণা করা হতো আমাদের চোখ হতে আলো কোনো বস্তুর উপর পড়ে, তাই আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই। আসলে যখন কোনো বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে আসে, তখনই কেবল আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই।

 

আলোর প্রধান প্রধান ধর্মগুলো নিম্নরূপ:

  1. কোনো স্বচ্ছ সমসত্ব মাধ্যমে আলো সরলপথে চলে।
  2. কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে আলো একটি নির্দিষ্ট বেগে চলে।
  3. আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন, বিচ্ছুরণ এবং সমবর্তন ঘটে।
  4. আলো এক প্রকার শক্তি।
  5. আলো এক ধরনের তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ।
  6. কোনো কোনো ঘটনায় আলো তরঙ্গের ন্যায়, আবার কখনো কখনো আলো কণার ন্যায় আচরণ করে।

 

আলোর প্রতিফলন:

  1. যে সকল বস্তু নিজে থেকে আলো নিঃসরণ করে তাদেরকে বলা হয় দীপ্তিমান বস্তু। যেমন-সূর্য,তারা, জলন্ত মোমবাতি, নক্ষত্র ইত্যাদি।
  2. যে সকল বস্তু নিজের আলো নেই বা নিজে আলো নিঃসরণ করতে পারে না তাদেরকে বলা হয় দীপ্তিহীন বস্তু। যেমন- মানুষ, গাছপালা, টেবিল, দেয়াল, ছবি, চক বোর্ড ইত্যাদি।
  3. যখন দীপ্তিমান বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে আসে তখন আমরা সেই বস্তুটি দেখতে পাই।
  4. আলোর প্রতিফলনের কারণে আমাদের চারপাশে যে সকল দীপ্তিহীন সাধারণ বস্তু আছে সেগুলো আমরা দেখতে পাই।
  5. একটি স্বচ্ছ I সমসত্ত্ব মাধ্যমে আলোকরশ্মি সরলপথে গমন করে এবং একই বেগে চলে।
  6. আলোকরশ্মি যখন এক মাধ্যম দিয়ে চলতে চলতে অন্য এক মাধ্যমের কোনো তলে আপতিত হয় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল হতে কিছু পরিমাণ আলো আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। এ ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে।
  7. যে পৃষ্ঠ হতে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তাকে প্রতিফলক পৃষ্ঠ বলে।

 

প্রতিফলনের সূত্র:

  1. আপতিত রশ্মি এবং প্রতিফলিত রশ্মি দুটি সহজ সূত্র মেনে চলে-
  • প্রথম সূত্র: আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
  • দ্বিতীয় সূত্র: প্রতিফলন কোণ আপতন কোণের সমান হয়।
  1. যখন আলো কোনো পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয় তখন তা অবশ্যই প্রতিফলনের সূত্র মেনে চলে।
  2. কোনো পৃষ্ঠ থেকে কীভাবে আলো প্রতিফলিত হবে তা নির্ভর করে প্রতিফলকের পৃষ্ঠের প্রকৃতির উপর।

 

প্রতিফলক পৃষ্ঠের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে প্রতিফলনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।



 

নিয়মিত প্রতিফলন :

  1. যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি কোনো মসৃণ তলে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ বা অভিসারী বা অপসারী রশ্মিগুচ্ছে পরিণত হয় তবে এ ধরণের প্রতিফলনকে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন বলে।
  2. উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি কোনো সমতল দর্পণে বা খুব ভালোভাবে পালিশ করা কোনো ধাতব পৃষ্ঠে আপতিত হয়, তবে প্রতিফলনের পরেও রশ্মিগুচ্ছ সমান্তরাল থাকে। এ ক্ষেত্রে রশ্মিগুচ্ছের প্রত্যেকটি আলোকরশ্মির আপতন কোণের মান সমান এবং নিয়মিত প্রতিফলনের ফলে প্রত্যেকটি রশ্মির প্রতিফলন কোণেরও মান সমান হয়।

 

ব্যাপ্ত প্রতিফলন:

  1. যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি কোনো তলে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর আর সমান্তরাল না থাকে বা অভিসারী বা অপসারী রশ্মিগুচ্ছে পরিণত না হয় তবে এ ধরণের প্রতিফলনকে আলোর ব্যাপ্ত বা অনিয়মিত প্রতিফলন বলে।
  2. একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোকরশ্মি একটি অমসৃণ তলে আপতিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে রশ্মিগুলো অমসৃণ তলের বিভিন্ন আপতন বিন্দুতে বিভিন্ন আপতন কোণে আপতিত হয়, ফলে এ সকল রশ্মির আনুষঙ্গিক প্রতিফলন কোণগুলোও বিভিন্ন হয়। যার ফলে প্রতিফলিত রশ্মিগুলো আর সমান্তরাল থাকে না।
  3. আমাদের চারপাশে যে সকল বস্তু দেখতে পাই, তাদের অধিকাংশের পৃষ্ঠ মসৃণ নয়। ফলশ্রুতিতে আমাদের চোখে যে সকল প্রতিফলিত রশ্মি প্রবেশ করে তারা ব্যাপ্ত প্রকৃতির। যার ফলে বস্তুগুলো আমাদের নিকট উজ্জ্বল না হয়ে অনুজ্জ্বল দেখায়।
  4. খালি চোখে দেখা অধিকাংশ পৃষ্ঠ আপাতদৃষ্টিতে মসৃণ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সকল পৃষ্ঠ মসৃণ নয়। যখন অনুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা এ সকল পৃষ্ঠ দেখা হয় তখন তা বোঝা যায়।

দর্পণ:

  1. দর্পণ হলো এমন একটি মসৃণ তল যেখানে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে।
  2. দর্পণে আলোর প্রতিফলনের ফলে দর্পণের সামনে স্থাপিত বস্তুর একটি স্পষ্ট প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।
  3. একটি মসৃণ তলে প্রতিফলক আস্তরণ দিয়ে দর্পণ প্রস্তুত করা হয়।
  4. কাচের এক পৃষ্ঠে ধাতুর প্রলেপ লাগিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়। কাচের উপর পারদ বা রুপার প্রলেপ লাগানোর এই প্রক্রিয়াকে ‘পারা লাগানো’ বা সিলভারিং বলা হয়।
  5. দর্পণে ধাতুর প্রলেপ লাগানো পৃষ্ঠের বিপরীত পৃষ্ঠটি এক্ষেত্রে প্রতিফলক পৃষ্ঠ হিসেবে কাজ করে।
  6. স্থির পানি পৃষ্ঠ, মসৃণ বরফ ইত্যাদিও দর্পণের ন্যায় কাজ করে থাকে।

 

দর্পণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

  1. সমতল দর্পণ
  2. গোলীয় দর্পণ

 

সমতল দর্পণ:

  1. প্রতিফলক পৃষ্ঠটি যদি মসৃণ I সমতল হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে,তবে সে পৃষ্ঠকে সমতল দর্পণ বলে।
  2. আমরা সচরাচর যে দর্পণ বা আয়না ব্যবহার করে থাকি। সেটি হলো সমতল দর্পণ।

 

গোলীয় দর্পণ:

  1. প্রতিফলক পৃষ্ঠটি যদি মসৃণ এবং গোলীয় হয় অর্থাৎ প্রতিফলক পৃষ্ঠটি যদি কোনো গোলকের অংশবিশেষ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তবে তাকে গোলীয় দর্পণ বলে।
  2. একটি কাচের ফাপা গোলকের খানিকটা অংশ কেটে নিয়ে যদি তার এক পৃষ্ঠে পারা লাগানো হয়, তবে গোলীয় দর্পণ

তৈরি হয়।

 

গোলীয় দর্পণ আবার দুই প্রকার। যথা-

  1. অবতল দর্পণ
  2. উত্তল দর্পণ

অবতল দর্পণ:

  1. কোনো গোলকের অবতল পৃষ্ঠ যদি প্রতিফলকরূপে কাজ করে অর্থাৎ আলোর নিয়মিত প্রতিফলন যদি গোলীয় দর্পণের অবতল পৃষ্ঠ হতে সংঘটিত হয় তবে সে দর্পণকে অবতল দর্পণ বলে।
  2. গোলকের কেটে নেয়া অংশের উত্তল পৃষ্ঠে পারা লাগিয়ে অবতল দর্পণ তৈরি করা হয় ।
  3. অবতল দর্পণ একটি অভিসারী দর্পণ ।
  4. অবতল দর্পণে সমান্তরাল আলোকরশ্মি আপতিত হওয়ার পর প্রতিফলিত হয়ে একটি বিন্দুতে অভিসারীত হয় বা একত্রে মিলিত হয়।

 

উত্তল দর্পণ:

  1. কোনো গোলকের উত্তল পৃষ্ঠ যদি প্রতিফলকরূপে কাজ করে অর্থাৎ আলোর নিয়মিত প্রতিফলন যদি গোলীয় দর্পণের উত্তল পৃষ্ঠ হতে সংঘটিত হয়, তবে সে দর্পণকে উত্তল দর্পণ বলে।
  2. গোলকের কেটে নেওয়া অংশের অবতল পৃষ্ঠে অর্থাৎ ভিতরের দিকে পারা লাগিয়ে উত্তল দর্পণ তৈরি করা হয়।
  3. উত্তল দর্পণ একটি অপসারী দর্পণ।
  4. উত্তল দর্পণে সমান্তরাল আলোকরশ্মি উত্তল দর্পণে আপতিত হয়ে প্রতিফলিত হবার পর অপসারী রশ্মিগুচ্ছে পরিণত হয় অর্থাৎ ছড়িয়ে পড়ে এবং কখনই একটি বিন্দুতে মিলিত হয় না।

মেরু:

  1. গোলীয় দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠের মধ্যবিন্দুকে দর্পণের মেরু বলে।
  2. অবতল দর্পণের ক্ষেত্রে প্রতিফলক পৃষ্ঠের সবচেয়ে নিচু বিন্দু এবং উত্তল দর্পণের ক্ষেত্রে প্রতিফলক পৃষ্ঠের সবচেয়ে উচু বিন্দুই দর্পণের মেরু।

বক্রতার কেন্দ্র :

  1. গোলীয় দর্পণ যে গোলকের অংশবিশেষ, সেই গোলকের কেন্দ্রকে ঐ দর্পণের বক্রতার কেন্দ্র বলে।

বক্রতার ব্যাসার্ধ :

  1. গোলীয় দর্পণ যে গোলকের অংশ, সেই গোলকের ব্যসার্ধকে ঐ দর্পণের বক্রতার ব্যাসার্ধ বলে। বক্রতার ব্যাসার্ধকে r  দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

প্রধান অক্ষ :

  1. গোলীয় দর্পণের মেরু I বক্রতার কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী সরলরেখাকে দর্পণের প্রধান অক্ষ বলে।

গৌণ অক্ষ :

  1. মেরু বিন্দু ব্যতিত দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠের উপরস্থ যে কোনো বিন্দু I বক্রতার কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকারী সরলরেখাকে গৌণ অক্ষ বলে।

প্রধান ফোকাস :

  1. প্রধান অক্ষের নিকটবর্তী I সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ কোনো গোলীয় দর্পণে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর

প্রধান অক্ষের উপর যে বিন্দুতে মিলিত হয় (অবতল দর্পণে) বা যে বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় (উত্তল

দর্পণে) তাকে ঐ দর্পণের প্রধান ফোকাস বলে।

 

ফোকাস দূরত্ব :

  1. গোলীয় দর্পণের মেরু বিন্দু থেকে প্রধান ফোকাস পর্যন্ত দূরত্বকে ফোকাস দূরত্ব বলে। একে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  2. গোলীয় দর্পণের ফোকাস দূরত্ব বক্রতার ব্যাসার্ধের অর্ধেক, অর্থাৎ f= r/2

 

ফোকাস তল :

  1. গোলীয় দর্পণের প্রধান ফোকাসের মধ্য দিয়ে প্রধান অক্ষের সাথে লম্বভাবে যে সমতল কল্পনা করা হয়, তাকে ফোকাস তল বলে।

প্রতিবিম্ব:

  1. কোনো বিন্দু হতে নির্গত আলোকরশ্মিগুচ্ছ কোনো তলে প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হবার পর দ্বিতীয় কোনো বিন্দুতে মিলিত হয় বা দ্বিতীয় কোনো বিন্দু হতে অপসারিত হচ্ছে বলে মনে হয়, তখন ঐ দ্বিতীয় বিন্দুটিকে প্রথম বিন্দুর প্রতিবিম্ব বলে।
  2. বস্তু থেকে আলোকরশ্মি যদি সরাসরি আমাদের চোখে না এসে অন্য কোনো মাধ্যমে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে চোখে প্রবেশ করে তখন আমরা বস্তুর যে প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই তাই হলো বস্তুর প্রতিবিম্ব।

 

প্রতিবিম্ব দুই প্রকারের হয়-

  1. বাস্তব প্রতিবিম্ব
  2. অবাস্তব প্রতিবিম্ব

 

বাস্তব প্রতিবিম্ব:

  1. কোনো বিন্দু হতে নিঃসৃত আলোক রশ্মিগুচ্ছ কোনো তলে প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হবার পর যদি দ্বিতীয় কোনো বিন্দুতে প্রকৃতপক্ষে মিলিত হয় তাহলে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুটিকে প্রম বিন্দুর বাস্তব প্রতিবিম্ব বলে।
  2. বাস্তব প্রতিবিম্ব পর্দায় ফেলা যায়।
  3. যে সকল প্রতিবিম্বে আলো সত্যিকার অর্থে মিলিত হয় সেগুলোকে বলা হয় বাস্তব প্রতিবিম্ব।

 

 

অবাস্তব প্রতিবিম্ব:

  1. কোনো বিন্দু হতে নিঃসৃত আলোক রশ্মিগুচ্ছ কোনো তলে প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হবার পর যদি দ্বিতীয় কোনো বিন্দু থেকে অপসারিত হচ্ছে বলে মনে হয়, তবে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুটিকে প্রম বিন্দুর অবাস্তব প্রতিবিম্ব ।
  2. অবাস্তব প্রতিবিম্ব পর্দায় ফেলা যায় না।
  3. যে সকল প্রতিবিম্বে আলো সত্যিকার অর্থে মিলিত হয় না সেগুলোকে বলা হয় বাস্তব প্রতিবিম্ব।

 

 

আমরা জানি,



 

সমতল দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের নিম্নলিখিত ধর্মগুলো রয়েছে:

  1. সমতল দর্পণ থেকে বস্তুর দূরত্ব যত, দর্পণ থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্বও তত।
  2. প্রতিবিম্বের আকার লক্ষবস্তুর আকারের সমান।
  3. প্রতিবিম্ব অবাস্তব এবং সোজা।

 

গোলীয় দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্ব:

নিম্নবর্ণিত তিনটি রশ্মির যে কোনো দু’টি ব্যবহার করে আমরা গোলীয় দর্পণে প্রতিবিম্ব আঁকতে পারি।

  1. গোলীয় দর্পণের বক্রতার ব্যাসার্ধ বরাবর আপতিত রশ্মি প্রতিফলনের পর পুনরায় সেই পথেই ফিরে আসে।
  2. অবতল দর্পণের প্রধান অক্ষের সমান্তরালে আপতিত রশ্মি প্রতিফলনের পর প্রধান ফোকাস দিয়ে যায়; উত্তল দর্পণের প্রধান অক্ষের সমান্তরালে আপতিত রশ্মি প্রতিফলনের পর প্রধান ফোকাস হতে আসছে বলে মনে হয়
  3. অবতল দর্পণের প্রধান ফোকাসের মধ্য দিয়ে আপতিত রশ্মি প্রধান অক্ষের সমান্তরালে প্রতিফলিত হয়; উত্তল দর্পণের প্রধান ফোকাস অভিমুখে আপতিত রশ্মি প্রতিফলনের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়।

 

অবতল দর্পণে প্রতিবিম্ব:

গোলীয় দর্পণে গঠিত প্রতিবিম্বের অবস্থান, আকৃতি I প্রকৃতি দর্পণের সামনে অবস্থিত লক্ষবস্তুর অবস্থানের উপর নির্ভর করে। লক্ষবস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হলে প্রতিবিম্বের অবস্থান, আকৃতি ও প্রকৃতিরও পরিবর্তন ঘটে।

 

পেরিস্কোপ

আকারে লক্ষবস্তুর চেয়ে ছোট হয়। লক্ষবস্তুকে ক্রমশ দর্পণের নিকটে আনা হলে প্রতিবিম্বও দর্পণের কাছে সরে

আসবে এবং প্রতিবিম্বের আকৃতি ক্রমশ বড় হতে থাকবে তবে তা সর্বদাই বস্তুর আকারের চেয়ে ছোট থাকবে।

 

গোলীয় দর্পণে প্রতিবিম্ব সৃষ্টির কিছু সাধারণ ঘটনা

১. সরল পেরিস্কোপ:

  1. দূরের কোনো জিনিস সরাসরি দেখতে বাধা থাকলে একটি লম্বা আয়তাকার কাঠ বা ধাতব নলের মধ্যে দুটি সমতল দর্পণকে পরস্পরের সমান্তরাল এবং নলের অক্ষের সাথে ৪৫° কোণ করে রেখে আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তন করে আমরা সরাসরি দেখতে পাই না এমন বস্তুকেও দেখতে পাই। সমতল দর্পণ ব্যবহার করে এভাবে যে যন্ত্র তৈরী করা হয় তাকে পেরিস্কোপ বলে।
  2. ভীড়ের মধ্যে খেলা দেখা, উঁচু দেয়ালের উপর দিয়ে দেখা, শত্রু সৈন্যের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কাজে পেরিস্কোপ ব্যবহার করা হয়।
  3. ডুবোজাহাজে প্রিজম ব্যবহার করে আরো উন্নত ধরনের পেরিস্কোপ ব্যবহার করা হয়।

 

২. সেলুনে সমতল দর্পণ: সেলুনে বা পার্লারে চুল কাটানোর সময় আমরা সামনে I পেছনে সমতল দর্পণ দেখতে পাই।

সামনের দর্পণে আমরা মাথার সম্মুখভাগ দেখতে পাই। মাথার পেছনে অবস্থিত দর্পণে মাথার পেছনের অংশের প্রতিবিম্ব

গঠিত হয়। এই প্রতিবিম্ব সামনের দর্পণের জন্য অবাস্তব বস্তু হিসেবে কাজ করে এবং সামনের দর্পণে পুনরায়

প্রতিবিম্ব গঠন করে। ফলে সামনে অবস্থিত দর্পণে আমরা মাথার পশ্চাদভাগও দেখতে পাই।

 

৩. চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবতল দর্পণ:

  1. দাঁতের চিকিৎসকরা দাঁত পরীক্ষা করার কাজে অবতল দর্পণ ব্যবহার করেন। দাঁত পরীক্ষা করার সময় দর্পণটিকে দাঁতের বেশ নিকটে ধরা হয়। ফলে দর্পণে দাঁতের একটি অবাস্তব I বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।
  2. এ ছাড়া নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকরাও বিভিন্ন প্রয়োজনে অবতল দর্পণ ব্যবহার করে থাকেন।

 

দর্পণের ব্যবহার

বিভিন্ন ধরণের দর্পণ আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। এগুলো নিম্নে  বর্ণনা করা হলো:

সমতল দর্পণ:

  1. সমতল দর্পণের সাহায্যে আমরা আমাদের চেহারা দেখি।
  2. চোখের ডাক্তারগণ রোগীর দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করার জন্য বর্ণমালা পাঠের সুবিধার্থে সমতল দর্পণ ব্যবহার করে থাকেন।
  3. সমতল দর্পণ ব্যবহার করে পেরিস্কোপ তৈরি করা হয়।
  4. পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে দুর্ঘটনা এড়াতে এটি ব্যবহার করা হয়।
  5. বিভিন্ন আলোকীয় যন্ত্রপাতি যেমন- টেলিস্কোপ,ওভারহেড প্রজেক্টর, লেজার তৈরি করতে সমতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  6. নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদির সুটিং এর সময় সমতল দর্পণ দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে কোনো স্থানের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করা হয়।

 

অবতল দর্পণ:

  1. সুবিধাজনক আকৃতির অবতল দর্পণ ব্যবহার করে মুখমণ্ডলের বিবর্ধিত এবং সোজা প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয়, এতে রূপচর্চা I দাঁড়ি কাঁটার সুবিধা হয়।
  2. দন্ত চিকিৎসকগণ অবতল দর্পণ ব্যবহার করেন।
  3. প্রতিফলক হিসেবে অবতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়। যেমন- টর্চলাইট, স্টিমার বা লঞ্চের সার্চলাইটে অবতল দর্পণ ব্যবহার করে গতিপথ নির্ধারণ করা হয়।
  4. অবতল দর্পণের সাহায্যে আলোকশক্তি, তাপশক্তি ইত্যাদি কেন্দ্রীভূত করে কোনো বস্তুকে উত্তপ্ত করতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি রাডার এবং টিভি সংকেত সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ডিশ এন্টেনা, সৌরচুল􀂇ী, টেলিস্কোপ এবং রাডার সংগ্রাহক ইত্যাদি।
  5. অবতল দর্পণের সাহায্যে আলোক রশ্মিগুচ্ছকে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা যায় বলে ডাক্তাররা চোখ, নাক, কান ও গলা পরীক্ষা করার সময় এ দর্পণ ব্যবহার করেন।

 

উত্তল দর্পণ:

  1. উত্তল দর্পণ সর্বদা অবাস্তব, সোজা এবং খর্বিত প্রতিবিম্ব গঠন করে বিধায় পেছনের যানবাহন বা পথচারী দেখার জন্য গাড়িতে এবং বিয়ের সময় ভিউ মিরর হিসেবে এ দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  2. উত্তল দর্পণের সাহায্যে বিস্তৃত এলাকা দেখতে পারা যায় বলে দোকান বা শপিংমলে নিরাপত্তার কাজে উত্তল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  3. প্রতিফলক টেলিস্কোপ তৈরিতে এ দর্পণ ব্যবহৃত হয়।
  4. এ দর্পণ বিস্তৃত এলাকায় আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দেয় বলে রাস্তার বাতিতে প্রতিফলকরূপে ব্যবহৃত হয়।

 

নিরাপদ ড্রাইভিং:

নিরাপদে গাড়ি, মোটর সাইকেল ইত্যাদি যানবাহন চালানোর জন্য চালককে অনেক কিছু খেয়াল করতে হয়।

  1. প্রথমেইতাকে গাড়ির সকল বাতি জ্বালিয়ে এগুলো ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হয়।
  2. নিঁখুত এবং নিরাপদ গাড়িচালাতে হলে চালককে শুধুমাত্র গাড়ির সামনে কী আছে তা দেখলেই চলে না। বরং গাড়ির পিছনে কী আছে এ ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হয়।
  3. গাড়ির জন্য দর্পণগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অঙ্গ।
  4. এজন্য গাড়ি চালককে গাড়িতে উঠার পরপরই দর্পণগুলোকে ঠিকমত উপযোজন করতে হয়।

 

পাহাড়ী রাস্তার অদৃশ্য বাঁক

নিরাপদ গাড়িচালনা সকল গাড়িচালকের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। এছাড়া খারাপ আবহাওয়া যেমন- বৃষ্টিপাত, কুয়াশার

মাঝে গাড়ি চালানো আরও কঠিন কাজ। বিশেষত পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানো অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা পার্বত্য

সড়ক যেমন আকাবাঁকা, তেমনি যথেষ্ট উচু নিচু [চিত্র ৮.২৩]। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়িচালনার জন্য অনেক সময় ৯০􀁱

কোণে বাঁক নিতে হয়। এই বাঁক নেওয়ার সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অদৃশ্য বাঁকে বিপরীত দিক

থেকে আসা গাড়ির চালক পরস্পরকে দেখতে পান না, এছাড়া বাঁকের অপর পাশে কী আছে তা আদৌ তারা জানেন না।

এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিপজ্জনক বাঁকে ৪৫􀁱 কোণে বৃহৎ আকৃতির সমতল দর্পণ বসানো হয়। এর ফলে

গাড়িচালকগণ বাঁকের আশেপাশে সবকিছু দেখতে পান এবং নিরাপদে গাড়ি চালাতে সক্ষম হন। মনে রাখতে হবে,

পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে কখনও জোরে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। এছাড়া জরুরি কোনো কাজ না থাকলে রাতের বেলায়

পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানো উচিত নয়। কেননা আলোক স্বল্পতার জন্য রাতের বেলায় দৃষ্টিগ্রাহ্যতা অনেক কমে যায়।

 

বিবর্ধন:

  1. কোনো দর্পণ বা লেন্সে গঠিত প্রতিবিম্ব বস্তুর চেয়ে আকারে কতটুকু বড় বা ছোট বিবর্ধন দ্বারা তা পরিমাপ করা হয়।
  2. প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য ও লক্ষবস্তুর দৈর্ঘ্যের অনুপাতকে রৈখিক বিবর্ধন বা সংক্ষেপে বিবর্ধন বলে।

Report this ad

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১