সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি -হার্ভেস্টার; ও কিছু কথা
আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। আমাদের দেশের রক্তদাতার প্রধান উৎস হল রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনার। যেমন- আপনার প্রয়োজনে আপনার আত্মীয়-স্বজন এসে রক্ত দিল। আর স্বেচ্ছায় রক্তদান হয়তো নির্দিষ্ট সময় পর পর, কে রক্ত পাবে, কোথায় যাবে, কি হবে কিছুই সে জানতে পারবে না। এই স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ।
রক্ত মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণমাত্রায় রক্ত থাকলে মানব দেহ থাকে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলেই শরীর অকেজো ও দুর্বল হয়ে প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। আর এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কারখানায় তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে এমনটাও আশা করা যায় না। মানুয়ের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তই লাল। এর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। মানুষের শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে, রক্ত ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়। যেমন- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, রক্তবমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে, দুর্ঘটনায় আহত রোগী, আস্ত্রোপচারের রোগী, সন্তান প্রসবকালে, ক্যান্সার বা অন্যান্য জটিল রোগ, এনিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার ইত্যাদি রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া বর্তমানে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে, যা সফল করতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়।
হার্ভেস্টার; পীরগঞ্জ ঠাকুরগাঁও ।
১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা প্রতি চার মাস পর পর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১০ ভাগের ১ ভাগ। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দু’সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না বরং শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণ ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়।
এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে শুধু একটি নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কেননা এক ব্যাগ রক্তকে এর উপাদান হিসেবে তিনভাগে ভাগ করে তিনজনের দেহে সঞ্চালন করা সম্ভব। উপাদানগুলো হল- Red Blood Cell, Platelet & Plasma or
Cryoprecipitate. এক একজনের জন্য এক একটি উপাদান প্রয়োজন হয়। তাই আপনার এক ব্যাগ রক্ত একসঙ্গে বাঁচাতে পারে তিনটি প্রাণ।
সামান্য পরিমাণ রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ। রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয়ই না বরং নিয়মিত রক্তদান করলে বেশ কিছু উপকারও পাওয়া যায়। যেমন-
* একবার ভাবুন আপনার এক ব্যাগ রক্তদানে একসঙ্গে তিনজন মানুষের জীবন বেঁচে উঠছে। সে মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
* রক্তদাতা রক্তদান করলে জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কি না।
* নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তদাতার হার্ট ভালো থাকে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
* নিয়মিত রক্তদানে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে রক্তদাতার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির ঝুঁকি কমে যায়।
* রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বাড়ে।
* শরীরে রক্তকণিকা তৈরির কারখানা হল অস্থিমজ্জা। নিয়মিত রক্তদান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরির চাপ থাকে। ফলে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে। এতে যে কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারে।
* স্বেচ্ছায় রক্তদাতাকে একটি ডোনার কার্ড দেয়া হয়। ওই কার্ড দিয়ে রক্তদাতা নিজে এবং নিজের পরিবার প্রয়োজনে আজীবন ওই প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত পেতে পারেন।
* রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে পুণ্যের কাজ।
লেখক : কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
১. “তুচ্ছ নয় রক্তদান,
বাঁচাতে পারে একটি প্রাণ”
২. “রক্ত দিলে হয়না ক্ষতি,
জাগ্রত করে মানবিক অনুভুতি”
৩. “জীবন বাঁচাতে সহযোগীতা করতে চান,
তাহলে মুমূর্ষ রোগীকে করুন- রক্তদান”
৪.
“হাতে থাকে অন্তত ২ জন ব্লাডডোনার,
সুরক্ষিত থাকবে গর্ভবতি মায়ের প্রাণ"
Blood Donner Family: Harvester
৫. "আপনার রক্তে বাঁচতে হাজারও প্রান- যদি করেন রক্ত দান,
তাহলে আপনারা কেন করবননা রক্তদান?”
৬. “যদি হই রক্তদাতা,
জয় করবো মানবতা”
৭. “স্বয়ং করে ফেলুন একটি নিয়ত,
রক্ত দিয়ে বাঁচাবো অসুস্থর জীবন”
৮. “মানবতার টানে,
ভয় নেই রক্তদানে”
৯. “আপনার এক ব্যাগ রক্তদান,
বাঁচাতে সহযোগিতা করবে মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ”
১০. “যদি করেন নিয়মিত রক্ত-দান,
রক্তের অভাবে ঝরবেনা একটিও প্রাণ”
We have a dream - Harvester
১১. “স্বেচ্ছায় রক্তদান করুন,
মুমূর্ষ রোগীর মুখে হাঁসি ফোটান”
১২. “প্রতিবার রক্ত দিতে গিয়ে-একজন রক্তদাতা,
বিনাখরচে যাচাই করতে পারে-সার্বিক সুস্থতা”
১৩. “সুস্থ থাকলে করুন রক্তদান,
হার্ট এ্যাটাকের ঝুকি কমান”
১৪.
“Facebook এ রক্তের গ্রুপ ও সময় সেভ করুন,
এতে বিপদে সময় বিপদগ্রস্ত রক্তদাতা পায়”
১৫.
“স্বেচ্ছায় অসহায় রোগীকে রক্ত দিলে,
আল্লাহ বলেন এতে- সমগ্র জাতীর
প্রান বাঁচানো সওয়াব মিলবে”
ছবি সংগ্রহঃ মোঃ পাভেল রানা(স্যার)
১৬.
“শরীলে ইমিউনিটি শক্তি বৃদ্ধি করতে ,
নির্দিধায় করুন- রক্তদান”
১৭. “যারা নিয়মিত রক্ত দিবে,
তাদের রক্তের- কোলেস্টেরল কমবে”
১৮. “স্বেচ্ছায় রক্তদান করুন,
সামাজিক অঙ্গীকার পালন করুন”
১৯. “মনের ভয়কে দূর করুন,
স্বেচ্ছায় রক্তদান করুন”
২০. “কোন থ্যালাসেমিয়া রোগী যদি হয় আপনজন,
তাহলে আগে থেকেই রক্তদাতা প্রস্তুত রাখুন”
২১. ”মুমূর্ষু রোগীকে রক্তদিলে,
মানসিক তৃপ্তি মিলে”
২২. “একজন রক্তদানকারী,
নিঃসন্দেহে সে পরোপকারী”
২৩. “যারা নিয়মিত রক্ত দিবে,
তাদের ক্যান্সারের ঝুকি কমবে”
২৪. “মুমূর্ষ রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্ত দিবো,
দালালদের ব্যবসা বন্ধ করবো"
২৫. “রক্ত চাই রক্তদাতার,
দোয়া চাই সকলের”
২৬. “জরুরি রক্তের প্রয়োজনের সময়,
যে কোন গ্রুপই সহজলভ্য নয়”
২৭. “আমার রক্ত আমি দিবো,
অসহায় রোগীকে দিবো”
২৮. “জাতি ধর্ম ও দল নির্বিশেষে,
রক্ত দিবো হেসে হেসে”
২৯. “মুমূর্ষ রোগীর প্রাণের টানে,
এগিয়ে আসুন রক্তদানে”
৩০.
“প্রতিনিহত কথা বলুন রক্তদাতা সাথে,
যাতে ফের রক্তদানে আগ্রহী হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url